Subrata Byapari: বর্তমানে দিনে সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ পাওয়া একপ্রকার দুর্লভ ব্যাপার। কিন্তু যারা এমন মানুষ পান তারা সত্যিকারের ভাগ্যবান। এমনই এক সত্যিকারের ভালোবাসার নির্দশন সুব্রত এবং তৃষা। মধ্যবিত্ত রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভালোবাসার জন্য বেকার ছেলের হাত ধরেই নতুন জীবনের পথে পা বাড়িয়েছেন তৃষা। তাঁর ভালোবাসার যোগ্য সম্মান দিয়ে সাব ইন্সপেক্টর অব পুলিশ হয়ে উঠেছে সুব্রত। বাড়ির অমতেই সুব্রতকে বিয়ে করে এক অনিশ্চিত জীবন বেছে নিয়েছিলেন তৃষা। তাঁর বিশ্বাস ও ভরসার যোগ্য সম্মান দিয়েছেন সুব্রত।
বর্ধমানের হাঁসপুকুর গ্রামের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করে সুব্রত (Subrata Byapari)। সংসারের অভাব-অনটনকে ছায়াসঙ্গী করেই দিন কাটত তাঁর। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। খুব ছোট থেকেই নিজের জীবনে দারিদ্রতাকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন সুব্রত। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। ছোট থেকেই সুব্রত আগ্রহী ছিলেন লেখাপড়াতে। সেই মতোই চলত পড়াশোনা। মাধ্যমিকের পরীক্ষার ফলাফলের পর বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি। এরপর বাংলা কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক হন তিনি।
পরিবারের অভাব অনটনের মধ্যেও শিক্ষাকে সঙ্গী করে নিজের লক্ষের দিকে এগিয়ে যেতেন সুব্রত (Subrata Byapari)। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে সুব্রত বুঝতে পেরেছিলেন জীবনে নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলতে শিক্ষার কোনো বিকল্প হয়না। লক্ষ্য স্থির রেখে সৎপথে পরিশ্রম করলে একদিন যে সফলতা আসবেই তা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন সুব্রত। বিএড করার সময় তাঁর পরিচয় হয় তৃষার সঙ্গে।
তবে সম্পর্কের কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই তাঁদের উপর চাপ আসতে শুরু করে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। পরিস্থিতি প্রতিকুল হয়ে ওঠায় বাড়ির অমতেই ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে বাড়ি ছাড়ে তৃষা। সেই সময় কেউই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি তাঁদের দিকে। নিজেদের খাবারের যোগান ও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাঁরা। সেইসময় সকলের তাচ্ছিল্য ও কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের উপর ভরসা রেখে তাঁকে প্রতি মুহূর্তে ভরসা জুগিয়েছিলেন তৃষা।
অন্ধকারের দিন পেরিয়ে এক চিলতে আলোর দিশায় অবশেষে একটি কোকাকোলা কোম্পানিতে সেলসম্যানের একটি চাকরিতে যোগ দেন সুব্রত। তবে তার লক্ষ ছিল সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া। সেই মতো সারাদিনের কাজের পরেও বাড়ি ফিরে বই নিয়ে বসতেন সুব্রত। ২০২১ সালে যখন তৃষা এবং সুব্রতর বিয়ের সময়ে কলকাতা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেখে সেখানে প্রস্তাব করেছিলেন সুব্রত।
প্রিলিমিনারির ফল বেরোনোর পর দেখা যায় সেই তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। এরপর নিয়মমাফিক আরো বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে ২০২৩ সালের এর এক সংখ্যায় ফাইনাল রেজাল্ট বেরোনোর পর দেখা যায় চাকরিটা পাকা হয়ে গিয়েছে সুব্রতর। তাঁর চাকরির খবরে খুশি হয়ে ওঠেন তৃষা থেকে শুরু করে সুব্রতর পরিবার পরিজনরাও।ভালোবাসার মানুষের উপর ভরসা রেখে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তৃষা সেই যুদ্ধে যে শেষমেশ তাঁরই জয় হয়েছে তা সকলের কাছে প্রমাণ করে দিয়েছিল সুব্রত।
খবর সবার আগে জানতে অবশ্যই ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ । আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল এ।